বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » গণমাধ্যম » মুক্তিযুদ্ধে রক্তঋণের দায় এদেশের নবপ্রজন্মের ভুলে গেলে চলবে না
মুক্তিযুদ্ধে রক্তঋণের দায় এদেশের নবপ্রজন্মের ভুলে গেলে চলবে না
-আলোচনা সভায় বক্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
এদেশের নবপ্রজন্মের ভারতবিদ্বেষি মনোভাব দূর করতে ইতিহাস বিকৃতি রোধে সবাইকে সোচ্চার থাকার তাগিদ দিয়েছেন বীরমুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলেছেন, এদেশের তরুণ প্রজন্মকে ভুলে গেলে চলবে না একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সরকারের ভূমিকা এবং ও-ই দেশের সেনাসদস্যদের সহযোগিতা আত্মত্যাগ।
মঙ্গলবার ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির ৫১তম বর্ষে দুদেশের সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বাংলামটরে ‘ভারতের রক্তঋণ ও বাংলাদেশের নবপ্রজন্মের দায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদ।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধারা আরও বলেন, ইতিহাস বিকৃতি রোধে বাংলাদেশ-ভারতের মৈত্রী বেগবান রাখতে উভয় দেশের নবপ্রজন্মকে ভূমিকা রাখতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির যে কালো অধ্যায় সূচিত হয়েছে তার ফলেই মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মে ভারতবিদ্বেষি মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডের মহাসচিব ও মুক্তিযুদ্ধের বীরপ্রতীক আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী। এসময় তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভারতের যে রক্তঋণ রয়েছে তা বাংলাদেশ কোনদিনই শোধ করতে পারবে না। কিন্তু এদেশের নতুন প্রজন্মের প্রকৃত ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমরা এখনো তাদের প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পারিনি। উপরন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে নানা অপপ্রপার চালানো হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে, দেশ ভারতের অংশ হয়ে যাবে। যদিও বিগত ১৪ বছরে তার কিছুই হয়নি।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদ পারভেজ জুয়েল বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো ভারতের নতুন প্রজন্মকেও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে জানতে হবে। দু’দেশের প্রজন্ম যদি একাত্তরের মতো একাত্ম হতে পারে তবেই আগামী দিনে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী অটুট থাকবে।’
আলোচনায় পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও প্রকৃতঅর্থে আরও বহু আগেই তারা আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এক কোটির বেশি শরণার্থীকে দীর্ঘসময় সেখানে আশ্রয় দিয়ে, অস্ত্র-গোলাবারুদ দিয়ে; এমনকি ভারতীয় সেনাদের প্রত্যক্ষ যুদ্ধে পাঠিয়ে তারা যেভাবে বাংলাদেশের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল তার তুলনা বিশ্বে বিরল। বিশ্বশক্তির সঙ্গে সেই সময়ের ভারত সরকারকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে অসম লড়াই করতে হয়েছে তা অতুলনীয়।’
বাংলাদেশ ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির, ইতিহাস গবেষক রাইহান নাসরিন, আওয়ামী লীগের শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আবু সেলিম, আয়োজক সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী রুপশ্রী চক্রবর্তী, গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক সাংবাদিক শাহনাজ পারভীন এলিস, সদস্য টিটু প্রিভেল পাল, মো. আলমগীর, নূরুল ইসলাম ও শাকিল আহমেদ।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন সহযোগী ছিল বিশেষায়িত নিউজ পোর্টাল বহুমাত্রিক.কম ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নেতাজী সুভাষ আইডিওলজি (আইসিএনএসআই)।
বিষয়: #মুক্তিযুদ্ধে রক্তঋণের দায় এদেশের নবপ্রজন্মের ভুলে গেলে