শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Swadeshvumi
শনিবার ● ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
প্রচ্ছদ » জাতীয় » হ্যাটট্রিক করতে পারেন ওবায়দুল কাদের
প্রচ্ছদ » জাতীয় » হ্যাটট্রিক করতে পারেন ওবায়দুল কাদের
২৬৯ বার পঠিত
শনিবার ● ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

হ্যাটট্রিক করতে পারেন ওবায়দুল কাদের

---

২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ

সংগ্রাম-স্বাধীনতা-অর্জনে আওয়ামী লীগ

শাহনাজ পারভীন এলিস 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ। এই সম্মেলনে নির্ধারণ হবে আগামী তিন বছর কারা দেশের সর্ববৃহৎ এই দলের নেতৃত্ব দেবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ৩২ হাজার কাউন্সিরল ও ডেলিগেট ছাড়াও সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন বলে তারা ধারণা করছে দলের আয়োজক কমিটি।

সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। ৭ ফুট উচ্চতায় পদ্মা সেতুর উপরে নৌকার আদলে তৈরি মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট আর প্রস্থ ৪৪ ফুট। মূল মঞ্চে চার সারিতে চেয়ার সাজানো থাকবে। এছাড়া সাংস্কৃতিক পর্বের জন্যও তৈরি হয়েছে আলাদা মঞ্চ। মূল মঞ্চের প্রথমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাকি দুটিতে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

---

দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এবারের জাতীয় সম্মেলনের কর্মসূচি দু’দিনের পরিবর্তে একদিনে শেষ করা হবে। কাউন্সিলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে নেতৃত্ব বাছাই করা হয়েছে। কারণ আর মাত্র একবছর পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে করা হবে নেতৃত্ব নির্বাচন। তার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও দলটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের এই সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশে নেতাকর্মীদের উৎসাহেরও কমতি নেই।

বরাবরের মতো এবারের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেলো ৪১ বছর ধরে তিনি দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে। এবারও তিনিই হবেন দেশের সর্ববৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের সভাপতি এমনটাই ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ এর আগেও কয়েকবার শেখ হাসিনা নিজ থেকেই দলের এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাইলেও কাউন্সিলর-প্রতিনিধিরা তাতে রাজি হননি। কারণ এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাবৃন্দ। এজন্য বিগত চার দশক ধরে ঐতিহ্যবাহী এই দলের কাউন্সিলে মূল আকর্ষণ দাঁড়িয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদ। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।

কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক?

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এটি সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পদ। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কী এই পদে ‘হ্যাটট্রিক’ করতে যাচ্ছেন, নাকি নতুন কেউ আসছেন- তা নিয়েও দলের ভেতরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। কারণ এর আগে আওয়ামী লীগে টানা তিন মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের রেকর্ড কারও নেই।

ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার কারণে এই পদে পরিবর্তন আসতে পারে- এ নিয়ে দলটির নেতাদের মাঝে এতোদিন ধরে বেশ আলোচনা চললেও, বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে বেশ ভালো আছেন। গেলো দু’মাস ধরে জেলায় জেলায় দলীয় কার্যক্রম এবং সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন। কাজেই তিনি হয়তো তৃতীয়বারের মতো এই দলের গুরুত্বপূর্ণ এই পদে পুনরায় বহাল থাকবে এমন আলোচনাই প্রধান্য পাচ্ছে।

---

ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে এবার আলোচনায় আছেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও আবদুর রহমান। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্যাহও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী প্রকাশ করেছেন। এছাড়া দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকেও কেউ কেউ এই পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী মনে করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিটিকেই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন বলে আমরা আশা রাখি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার বিবেচনায় নিয়ে তিনি সম্মেলনে চাকচিক্য বাদ দিতে বলেছেন। ফলে আলোকসজ্জা, বাহুল্য থাকছে না। এবার বিদেশি কোন অতিথিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া বরাবরের মতো বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি ছাড়াও রাজনীতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং বিদেশি কূটনীতিকরা বিশেষভাবে আমন্ত্রিত। সব মিলিয়ে সম্মেলনে আসা ৫০ হাজার মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

---

জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূলের সম্মেলন সম্পন্ন করার কথা। করোনা মহামারির কারণে বর্তমান কমিটি প্রথম আড়াই বছর তেমন কোন সম্মেলন করতে পারেনি। তাই গেলো ছয় মাসে সম্মেলন করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা থেকে এরই মধ্যে ৬৮টি জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। বেশির ভাগই হয়েছে গত নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বরে।

প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৭২ বছরে এ পর্যন্ত ২১টি জাতীয় সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি।

গোড়াপত্তনের গল্প

দেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্ম হয় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। স্থানটি ছিলো ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেস। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইলের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।

পরবর্তীতে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সাল থেকে দলটির নির্বাচনি প্রতীক নৌকা। ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।



বিষয়: #



আর্কাইভ